কিভাবে পুনর্বাসন কাজ করে

মেডিকেল ডিটক্সিফিকেশন

এতে  প্রথমেই ব্যক্তির মাদক নেওয়াকে বন্ধ করা হয়। মাদক গ্রহণ বন্ধ করার ফলে প্রত্যাহারজনিত শারীরিক ও মানসিক উপসর্গ দেখা দেয়, যেমন: বমি, পাতলা পায়খানা, হাত-পা চাবানো, অস্থিরতা, উত্তেজনা, ঘুমের সমস্যা, ইত্যাদি। বিভিন্ন ধরনের ঔষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে এসকল উপসর্গের চিকিৎসা করা হয়। স্বল্পমেয়াদি এই চিকিৎসা (৭-১৫ দিন) দেশের বিভিন্ন ক্লিনিকে (ইনডোর/আউটডোর) ডাক্তার ও সাইকিয়াট্রিস্টদের তত্ত¡াবধানে পরিচালিত হয়ে থাকে। মাদকনির্ভরশীলতার চিকিৎসা সম্পর্কে সঠিকভাবে না জানার কারণে অনেক অভিভাবক এটিকেই পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা মনে করেন। অথচ এটি চিকিৎসার প্রথম ধাপ মাত্র।

পুনর্বাসন চিকিৎসা

মাদকনির্ভরশীলতার চিকিৎসায় পুনর্বাসন শব্দটি পুনরায় আবাসন অর্থে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ মাদক ব্যবহার করে ব্যক্তি যা হারিয়ে ফেলেছে চিকিৎসার মাধ্যমে তা ফিরে পায়। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার ভেতর দিয়ে একজন মাদকনির্ভরশীল ব্যক্তি শারীরিক-মানসিক ক্ষতি ও পারিবারিক-সামাজিক বিচ্ছিন্নতা কাটিয়ে উঠে মাদকমুক্ত জীবনের সুস্থ ধারায় ফিরে আসে।

এই পদ্ধতির শুরুতেই ব্যক্তিকে চিকিৎসা নিতে উৎসাহিত করা হয় এবং পরে তাকে ডিটক্সিফিকেশনের আওতায় নেওয়া হয়। ডিটক্সিফিকেশনের পরে এই চিকিৎসায় প্রধানত মাদক বিষয়ে শিক্ষা, মাদকের টান নিয়ন্ত্রণ ও পুনরায় মাদক ব্যবহার রোধে বিভিন্ন ধরনের স্কিল বা কৌশল এবং ব্যক্তির আচরণিক ও মানসিক নানা সমস্যা সমাধানে প্রশিক্ষণ ও বিজ্ঞানসম্মত থেরাপি প্রয়োগ করা হয়।

পুনর্বাসন চিকিৎসায় মাদকব্যবহারকারী ব্যক্তিকে তার মাদকনির্ভরশীল হয়ে পড়ার পুরো প্রক্রিয়াটা বুঝতে সাহায্য করা হয়। পাশাপাশি, কেন সে মাদক ব্যবহার করে চলেছে তাও ধরিয়ে দেওয়া  হয়। এছাড়াও, কোন্ কোন্ পরিস্থিতে সে আবার মাদক ব্যবহার করতে পারে সে বিষয়ে সচেতন করা এবং তা ঠেকানোর জন্য দরকারি শিক্ষা ও কৌশল রপ্ত করানো হয়।

এই পদ্ধতিতে ব্যক্তি কাজ, দ্বায়িত্ব পালন, বিনোদন-খেলাধূলা ও বিশ্রামের সামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যবহারের মাধ্যমে একটি ভারসাম্যপূর্ণ জীবন-যাপনের অভ্যাস গড়ে তুলে এবং এভাবে নিজেকে মাদকের টান থেকে রক্ষা করে। মেডিকেল ডিটক্সিফিকেশনের চেয়ে দীর্ঘমেয়াদি এই পুনর্বাসন চিকিৎসায় ব্যক্তি নিজেই তার সুস্থতার মূল দায়িত্ব নিয়ে নেয়।