জনস্বাস্থ্য ও মানসিক স্বাস্থ্য

মানসিক বিশৃঙ্খলা এখন একটি প্রধান বৈশ্বিক সমস্যা। বিশ্বজুড়ে অনেক মানুষই মানসিক বিশৃঙ্খলায়ভুগছেন। উন্নত বিশ্বের দেশগুলি এই সমস্যার সমাধানে প্রচুর অর্থ ও সময় ব্যয় করছে, তাদেরজনসাধারণের জীবনযাপনের মান উন্নয়ন ও তাদের আরও কার্যকরী করে তুলতে কাজ করে যাচ্ছে। এখনমানুষ শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক সমস্যাকেও সমান গুরুত্ব দিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর মতে, স্বাস্থ্য হলো, “পরিপূর্ণ শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক সুস্থতা। শুধুমাত্র রোগের অনুপস্থিতি নয়।”‍বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অবশ্য এই সমস্যার স্বরূপ একটু ভিন্ন। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য বলতে মানুষশারীরিক স্বাস্থ্যকেই বোঝে, মানসিক ও সামাজিক দিকটিকে উপেক্ষা করেন। এই সমস্যা থেকে বের হয়েআসতে যে পেশাদারি সাহায্যের প্রয়োজন তা খুব অল্পসংখ্যক মানুষই বুঝতে পারেন। জাতীয় মানসিকস্বাস্থ্য জরিপ ২০০৩–২০০৫ অনুযায়ী, এ দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ১৬.০৫ শতাংশই মানসিকবিশৃঙ্খলায় ভুগছেন। পাশাপাশি অনেক শিশু এবং কিশোর–কিশোরীও এই সমস্যায় আক্রান্ত। একটিজরিপে জানা যায়, এই জনসংখ্যার ১৩.৪ শতাংশ আচরণগত (৩.২%), আবেগীয় (৮.৯%) ও অন্যান্য(১.২%) মানসিক বিশৃঙ্খলায় ভুগছেন। (রব্বানী, ১৯৯৯)। মানসিক সমস্যার পাশাপাশি দিনে দিনেআত্মহত্যার প্রকোপও বাড়ছে। একটি সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে হাসপাতালে জরুরি অবস্থায় ভর্তিহওয়া ১০–২০% রোগীই আত্মহত্যার চেষ্টার কারণে ভর্তি হন।(রহমান, ১৯৮৬)। আরেকটি সমীক্ষায় দেখাযায়, বিশ্বে আত্মহত্যার হার বছরে ১৪.৫/১০০০০০ জন এবং বাংলদেশে এই হার ৮–১০/১০০০০০০ জন(আলম,২০০৪)। প্রয়োজনের তুলনায় এদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার পরমাণ খুবই অপ্রতুল। শুধুমাত্র .০১১% মানুষের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য। মানসিক বিশৃঙ্খলায় ভোগার অভিজ্ঞতা একজন ব্যক্তি ওতার পরিবারের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। সমাজ ও জাতীয় ক্ষেত্রেও এর প্রভাব শুভ নয়।মানসিক অসুস্থতা সম্পর্কে জনসচেতনতার অভাব, মানসিক অসুস্থতা বিষয়ে সামাজিক কুসংস্কার এবংচিত্তোন্মাদ ব্যক্তিদের অযথা নানা পরীক্ষা করে প্রচুর অর্থ অপচয় করা এর মূল কারণ। তাই সাধারণভাবেএটি বলা যেতে পারে যে, বাংলাদেশের মানুষ মানসিক অসুস্থতা ও এর নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে সচেতননন। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করার একটি প্রয়াস নিয়েছি।মানসিক স্বাস্থ্য বিভাগ “প্রিয়” সাইকোলজিকাল রিসার্চ এ্যান্ড ইন্টারভেনশন অনওয়ার্ড (পি আর আই ও) এইবিভাগ ক্রিয়ার চারটি মূল উদ্দেশ্যের একটির বাস্তবায়নের ফলাফল।  ‍